অন্যান্য কলকাতা 

Nawshad Siddiqui: রাজ্যের ১৭ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিল আইএসএফ ! সাফল্য না পেলে পরিণতি হবে মুসলিম লীগের মত?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বামেদের সঙ্গে জোট বিচ্ছিন্ন করার পর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ এককভাবে এই রাজ্যে ১৭ টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সদ্য জন্ম নেওয়া একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে বামেদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে লোকসভা ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে তাতে হিতে বিপরীত হলে অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের। আইএসএফ একটি আবেগ একটি উচ্ছ্বাস বলা যেতে পারে।

ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা এর উদ্যোগে এর যাত্রা শুরু। দক্ষিণবঙ্গের মুসলিম সমাজের মধ্যে কিছুটা প্রভাব যে পড়েছে তা স্বীকার করতেই হবে। তারমানে এটা নয় যে লোকসভা ভোটের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে তারা এককভাবে জিততে পারবে। যেকোনো কারণেই হোক ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট জোট থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আসলে মুসলিম পরিচালিত রাজনৈতিক দল এমনকি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো এই ধরনের এক গুয়েমি কাজ করে থাকে। আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে অসমের কথা। ২০০৭ সাল নাগাদ অসমে একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিল সেই রাজনীতি দলের নাম হচ্ছে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউ ডি এফ। জন্ম লগ্নে বদরুদ্দিন আজমল এর এই রাজনৈতিক দলটি সমগ্র অসমে মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেই সময় ওই রাজ্যে বিজেপির তেমন কোনো অস্তিত্ব ছিল না।

Advertisement

স্বাভাবিকভাবে কংগ্রেস ক্ষমতায় বসে আর বিরোধী আসনে ছিল বদরুদ্দিন আজমল। এই বদরুদ্দিন আজমল রাজনৈতিকভাবে নিজেকে এতটাই শক্তিশালী ভাবছিলেন তিনি পরবর্তীকালে আর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইল না। বহু অনুরোধ সত্বেও তিনি জোটে গেলেন না সংকটকালে। একদিকে মুসলিম ভোট গুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে বদরুদ্দিন আজমল পেতে শুরু করলো অন্যদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি এবং আরএসএস গোটা অসম জুড়ে তাদের সংগঠনকে সাজালো।

একথা বলতে দ্বিধা নেই বদরুদ্দীন আজমলের সেদিনের যে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ওই রাজ্যের সংখ্যালঘু এবং বাঙালি হিন্দুদের কাছে এক অবর্ণনীয় অবস্থায় পর্যবসিত করেছে। আসলে বদরুদ্দিন আজমল এর একটি ভুল তার মাশুল গুনতে হচ্ছে আসামের সাধারণ মানুষকে। একইভাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিজেদের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আর যাই হোক সুবিধা হবে বিজেপির। সংবাদমাধ্যমগুলো নওশাদ সিদ্দিককে প্রচারের আলোয় রেখেছে ঠিকই কিন্তু এটা নওশাদকে মনে রাখতে হবে এই ভোট কেটে যাওয়ার পর যদি বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রে এবং রাজ্যে ভালো আসন পায়,তাহলে নওশাদ সিদ্দিকী হয়ে যাবে ব্রাত্য।

আজকের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য নওশাদ সিদ্দিকীকে ইতিহাস কোনদিন ক্ষমা করবে না। কারণ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সর্বভারতীয় স্তরে কোন ঠাসা অবস্থায় রয়েছে। অবকি বার ৪০০ পার এই স্লোগান দেয়া হলেও আসলে ২৭২ বেরোতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কংগ্রেস যদি কমপক্ষে ১০০ টি আসন পেয়ে যায় তাহলে বিজেপির আসন কমে দাঁড়াবে ২৩০ এ। আর বিজেপি যদি ২৭২ পৌঁছাতে না পারে তাহলে তার জোট শরিকরা তাকে ত্যাগ করে চলে যাবে। এই অবস্থায় বাংলা থেকে বেশি লোকসভা আসন পাওয়ার লক্ষ্যে বিজেপি এখানে যা খুশি তা করার চেষ্টা করছে।

যেমন ধরুন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট মুর্শিদাবাদ এর জঙ্গিপুরে প্রার্থী দিয়েছে। বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী শাজাহান বিশ্বাস ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই কেন্দ্রে যদি ভোট কাটাকাটি হয় তাহলে বিজেপি প্রার্থী জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে যে অংক থেকে উত্তর প্রদেশের রামপুর লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপি জিতে নিয়েছে ,সেই অঙ্কেই জঙ্গিপুর জেতার চেষ্টা করছে বিজেপি। আর সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে আইএসএফ। আইএসএফ এই রাজ্যের লোকসভা আসনে জেতা তো দুরস্ত যদি জমানত রক্ষা করতে পারে তাহলে তাকে স্বাগত জানাবো আমরা।

আর রাজনৈতিক ভাবে আত্মঘাতী খেলা খেলেছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। বঙ্গ রাজনীতির বিষয়ে খানিকটা যদি সচেতন হতেন নওশাদ সিদ্দিকীরা তাহলে অন্তত চার থেকে পাঁচটি লোকসভা আসনের জোট করে লড়াই করতেন হয়তো এখনই সাফল্য পেতেন না। পাঁচটি লোকসভা আসন মানে ৩৫ টি বিধানসভা কেন্দ্র আর এই ৩৫টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে যদি সংগঠন তৈরি করে ১৫ থেকে কুড়িটা বিধায়ক তৈরি করতে পারতেন না নওশাদ সিদ্দিকীরা তাহলে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নে একটা দিশা দেখাতে পারতেন তা না করে যেভাবে হঠকারী সিদ্ধান্ত নওশাদ সিদ্দিক রা নিয়েছেন তাতে আগামী দিনে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এর পরিণতি যে মুসলিম লীগ হতে চলেছে তার বলার অপেক্ষা রাখে না।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ